অনলাইনে ঘড়িটা কেনার পর থেকেই মনটা খুঁতখুঁত করছে, বুবুলের কি সত্যি পছন্দ হবে? অর্ডার দেবার আগে যদিও ছবি দেখিয়েছিল…কিন্তু এখন হাতে পেয়ে দেখছে, বেশ খানিকটা অন্যরকম; একটু বড় ছেলেদের হাতে ভালো লাগবে হয়ত।লাঞ্চ টাইমে জ্যোতিষ্ককে বলেছিল তিয়াসা, আগের ঘড়িটা হারিয়ে যাবার পর কি রকম আপসেট হয়ে পরেছিল বুবুল, খুব পছন্দের ঘড়ি ছিল ওর। জ্যোতিষ্ক তখনই বলে, আজ তিয়াসার সাথে ওর বাড়ি যাবে সে।
এর আগে যদিও কয়েকবার গেছে ও তিয়াসার বাড়ি; তিয়াসার বাবা –মা ও পছন্দ করে তাকে। বুবুল কি ভাবে, ঠিক বুঝতে পারে না তিয়াসা। শমিককে ছেড়ে চলে আসার পর নিজেকে বোধহয় একটু বেশীই গুটিয়ে রেখেছে সে। সাহস বেড়েছে কিন্তু বুবুলের ক্ষেত্রে একটা আত্ম-দংশন তাকে তাড়া করে বেড়ায় যে; তার থেকে বের হতে পারছে না কিছুতেই।
অতসীর বন্ধু জ্যোতিষ্কর রেফারেন্সেই এই চাকরি, নিজের যোগ্যতা যাচাই করে কাজটা পেতে চেয়েছিল তিয়াসা, কোনও করুনা পাথেয় করে এগিয়ে চলতে সে অপারগ।
– বুবুল দেখে যা, তোর ঘড়িটা নিয়ে এসেছি…
বাড়িতে ঢুকেই ডাক পাড়ে তিয়াসা। বুবুল উৎসাহে ছুটে আসে। ব্যাগ থেকে বাক্সটা বের করার সঙ্গে সঙ্গে হাত থেকে কেড়ে নেয় বুবুল; কিন্তু খুলেই …. মিইয়ে যায়।
-কি হল, ঘড়িটা ভালো লাগলো না? জ্যোতিষ্ক জিজ্ঞেস করে।
-আমি ঠিক এমনটা চাই নি।বুবুলের উত্তর তিয়াসা কে আরও মনমরা করে দেয়।
-আচ্ছা, তুমি বোলো তো, কি কি হলে ভালো হতো ?মানে, ঘড়িটার জন্য তুমি মা কে কত নম্বর দেবে?
-আমার ব্ল্যাক বেল্ট ভালো লাগে।
-ও কে। এক পয়েন্ট মাইনাস করলাম… আর বোলো?
-এটা তো ওয়াটারপ্রুফ নয়…
-আচ্ছা, আরও এক পয়েন্ট কাটলাম।
-আর ?
-আর…… আর মোটামুটি ঠিকঠাক।
– তাহলে, মা কে দশে আট দেওয়া যায় তো ঘড়িটার জন্য?
বুবুল ঘাড় নাড়ে, মুখে খানিক হাসিও ফুটেছে এখন।
– যাও, মাকে একটু আদর করে দাও…সারাদিন অফিসে শুধু ভেবে গেছে, তুমি কত্ত খুশি হবে ঘড়ি পেয়ে……
বুবুল ছুটে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরে।
তিয়াসার চোখ জলে ভিজে….. আনন্দে আর কৃতজ্ঞতায়।